অভিমানের
খেয়া
এতোদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই
পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত
পারিজাতহীন কঠিন পাথরে
পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত
পারিজাতহীন কঠিন পাথরে
প্রাপ্য পাইনি
করাল দুপুরে,
নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা_
এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!
কিছুটা তো চাই- হোক ভুল হোক মিথ্যে প্রবোধ,
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই।
নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা_
এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!
কিছুটা তো চাই- হোক ভুল হোক মিথ্যে প্রবোধ,
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই।
আরো কিছুদিন, আরো কিছুদিন– আর কতোদিন?
ভাষাহীন তরু বিশ্বাসী ছায়া কতোটা বিলাবে?
কতো আর এই রক্ততিলকে তপ্ত প্রণাম!
জীবনের কাছে জন্ম কি তবে প্রতারণাময়?
ভাষাহীন তরু বিশ্বাসী ছায়া কতোটা বিলাবে?
কতো আর এই রক্ততিলকে তপ্ত প্রণাম!
জীবনের কাছে জন্ম কি তবে প্রতারণাময়?
এতো ক্ষয়, এতো ভুল জমে ওঠে বুকের বুননে,
এই আঁখি জানে, পাখিরাও জানে, কতোটা ক্ষরণ
কতোটা দ্বিধায় সন্ত্রাসে ফুল ফোটে না শাখায়
এই আঁখি জানে, পাখিরাও জানে, কতোটা ক্ষরণ
কতোটা দ্বিধায় সন্ত্রাসে ফুল ফোটে না শাখায়
তুমি জানো নাই– আমি তো জানি
কতোটা গ্লানিতে এতো কথা নিয়ে, এতো গান, এতো হাসি নিয়ে বুকে
নিশ্চুপ হয়ে থাকি
কতোটা গ্লানিতে এতো কথা নিয়ে, এতো গান, এতো হাসি নিয়ে বুকে
নিশ্চুপ হয়ে থাকি
বেদনার পায়ে
চুমু খেয়ে বলি এই তো জীবন,
এইতো মাধুরী, এই তো অধর ছুঁয়েছে সুখের সুতনু সুনীল রাত।
এইতো মাধুরী, এই তো অধর ছুঁয়েছে সুখের সুতনু সুনীল রাত।
তুমি জানো নাই– আমি তো জানি
মাটি খুঁড়ে কারা শষ্য তুলেছে,
মাংসের ঘরে আগুন পুষেছে
যারা কোনোদিন আকাশ চায়নি নীলিমা চেয়েছে শুধু,
করতলে তারা ধরে আছে আজ বিশ্বাসী হাতিয়ার
মাটি খুঁড়ে কারা শষ্য তুলেছে,
মাংসের ঘরে আগুন পুষেছে
যারা কোনোদিন আকাশ চায়নি নীলিমা চেয়েছে শুধু,
করতলে তারা ধরে আছে আজ বিশ্বাসী হাতিয়ার
পরাজয় এসে কণ্ঠ
ছুঁয়েছে লেলিহান শিখা,
চিতার চাবুক মর্মে হেনেছো মোহন ঘাতক
তবুও তো পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মুখর হৃদয়,
পুষ্পের প্রতি প্রসারিত এই তীব্র শোভন বাহু।
চিতার চাবুক মর্মে হেনেছো মোহন ঘাতক
তবুও তো পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মুখর হৃদয়,
পুষ্পের প্রতি প্রসারিত এই তীব্র শোভন বাহু।
বৈশাখী মেঘ
ঢেকেছে আকাশ
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়–
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমানে পুড়ে একা আর কতোটা জীবন?
কতোটা জীবন?’
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়–
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমানে পুড়ে একা আর কতোটা জীবন?
কতোটা জীবন?’
‘কিছুটা তো চাই– হোক ভুল হোক মিথ্যে প্রবোধ,
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই… ‘
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই… ‘
অবেলায়
শঙ্খধ্বনি
অতোটা হৃদয়
প্রয়োজন নেই,
কিছুটা শরীর কিছুটা মাংস মাধবীও চাই।
এতোটা গ্রহণ এতো প্রশংসা প্রয়োজন নেই
কিছুটা আঘাত অবহেলা চাই প্রত্যাখান।
সাহস আমাকে প্ররোচনা দেয়
জীবন কিছুটা যাতনা শেখায়,
ক্ষুধা ও খরার এই অবেলায়
অতোটা ফুলের প্রয়োজন নেই।
কিছুটা শরীর কিছুটা মাংস মাধবীও চাই।
এতোটা গ্রহণ এতো প্রশংসা প্রয়োজন নেই
কিছুটা আঘাত অবহেলা চাই প্রত্যাখান।
সাহস আমাকে প্ররোচনা দেয়
জীবন কিছুটা যাতনা শেখায়,
ক্ষুধা ও খরার এই অবেলায়
অতোটা ফুলের প্রয়োজন নেই।
বুকে ঘৃণা নিয়ে
নীলিমার কথা
অনাহারে ভোগা মানুষের ব্যথা
প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই-
করুণাকাতর বিনীত বাহুরা ফিরে যাও ঘরে।
অনাহারে ভোগা মানুষের ব্যথা
প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই-
করুণাকাতর বিনীত বাহুরা ফিরে যাও ঘরে।
নষ্ট যুবক
ভ্রষ্ট আঁধারে কাঁদো কিছুদিন
কিছুদিন বিষে দহনে দ্বিধায় নিজেকে পোড়াও
না হলে মাটির মমতা তোমাতে হবে না সুঠাম,
না হলে আঁধার আরো কিছুদিন ভাসাবে তোমাকে।
কিছুদিন বিষে দহনে দ্বিধায় নিজেকে পোড়াও
না হলে মাটির মমতা তোমাতে হবে না সুঠাম,
না হলে আঁধার আরো কিছুদিন ভাসাবে তোমাকে।
অতোটা প্রেমের
প্রয়োজন নেই
ভাষাহীন মুখ নিরীহ জীবন
প্রয়োজন নেই- প্রয়োজন নেই
ভাষাহীন মুখ নিরীহ জীবন
প্রয়োজন নেই- প্রয়োজন নেই
কিছুটা হিংস্র
বিদ্রোহ চাই কিছুটা আঘাত
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই, উষ্ণতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন।
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই, উষ্ণতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন।
মনে
পড়ে সুদূরের মাস্তুল
পেছনে তাকালে
কেন মূক হয়ে আসে ভাষা !
মনে পড়ে সেই সব দুপুরের জলাভূমি,
সেই সব বেতফল, বকুল কুড়ানো ভোর,
আহা সেই রাঙাদির আঁচলতলের উত্তাপ,
মনে পড়ে…….
মনে পড়ে সেই সব দুপুরের জলাভূমি,
সেই সব বেতফল, বকুল কুড়ানো ভোর,
আহা সেই রাঙাদির আঁচলতলের উত্তাপ,
মনে পড়ে…….
মনে পড়ে, বন্দরে সেই সব কালোরাত,
ঈগলের মতো ডানা সেই বিশাল গভীর রাতে,
একটি কিশোর এসে চুপি চুপি সাগরের কূলে
দাঁড়াতো একাকী
তন্ময় চোখে তার রাশি রাশি বিস্ময় নিয়ে।
ঈগলের মতো ডানা সেই বিশাল গভীর রাতে,
একটি কিশোর এসে চুপি চুপি সাগরের কূলে
দাঁড়াতো একাকী
তন্ময় চোখে তার রাশি রাশি বিস্ময় নিয়ে।
কবে তারে ডাক
দিয়ে নিয়ে গেলো যৌবন সুচতুর,
কবে তারে ডেকে নিলো মলিন ইটের কালো সভ্যতা !
কবে তারে ডেকে নিলো মলিন ইটের কালো সভ্যতা !
সবুজ ছায়ার
নিচে ঘুমে চোখ ঢুলে এলে
মা যাকে শোনাতো সেই তুষারদেশের কথা,
তার চোখে আজ এতো রাতজাগা ক্লান্তির শোক !
মা যাকে শোনাতো সেই তুষারদেশের কথা,
তার চোখে আজ এতো রাতজাগা ক্লান্তির শোক !
পেছনে তাকালে
কেন নিরবতা আসে চোখে !
মনে পড়ে- জ্যোৎস্নায় ঝলোমলো বালুচর,
একটি কিশোর- তার তন্ময় দুটি চোখে
রাশি রাশি কালোজল- সুদূরের মাস্তুল
মনে পড়ে…..
মনে পড়ে- জ্যোৎস্নায় ঝলোমলো বালুচর,
একটি কিশোর- তার তন্ময় দুটি চোখে
রাশি রাশি কালোজল- সুদূরের মাস্তুল
মনে পড়ে…..
গুচ্ছ
কবিতা
১.
থাকুক তোমার
একটু স্মৃতি থাকুক
একলা থাকার খুব
দুপুরে
একটি ঘুঘু
ডাকুক
২.
দিচ্ছো ভীষণ
যন্ত্রণা
বুঝতে কেন পাছো
না ছাই
মানুষ আমি, যন্ত্র না!
৩.
চোখ কেড়েছে চোখ
উড়িয়ে দিলাম
ঝরা পাতার শোক।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আমার ভিতর
বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন
কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।
পুষে রাখে যেমন
ঝিনুক,
খোলসের আবরনে মুক্তোর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।
খোলসের আবরনে মুক্তোর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।
ভালো আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।
আমার ভিতর
বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
কথা
ছিলো সুবিনয়
কথা ছিলো
রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত,
রাখালেরা পুনর্বার বাশিঁতে আঙুল রেখে
রাখালিয়া বাজাবে বিশদ।
কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না,
চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।
রাখালেরা পুনর্বার বাশিঁতে আঙুল রেখে
রাখালিয়া বাজাবে বিশদ।
কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না,
চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।
কথা ছিলো , শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম।
নদীর চুলের রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ,
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন।
নদীর চুলের রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ,
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন।
অথচ দ্রাক্ষার
রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল,
রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ,
বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই-
রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ,
বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই-
কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে
সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুরের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বোলবেঃ উদ্ধার পেয়েছি।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে
সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুরের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বোলবেঃ উদ্ধার পেয়েছি।
কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে
আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরন্য, জমিন, আমাদের
পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল-
আজন্ম এ-জলাভূমি খঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার।
আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরন্য, জমিন, আমাদের
পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল-
আজন্ম এ-জলাভূমি খঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার।
কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।
মাতৃভূমি-খন্ডিত
দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে
আর্য বণিকের হাত।
আর্য বণিকের হাত।
আর কী অবাক!
ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।
কথা ছিলো ’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।
উল্টো
ঘুড়ি
এতো সহজেই
ভালোবেসে ফেলি কেন!
বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-
বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-
দেবদারু-চুলে
উদাসী বাতাস মেখে
স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,
কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?
স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,
কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?
সহজেই আমি
ভালোবেসে ফেলি, সহজে ভুলিনা কিছু-
না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,
যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে
উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।
না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,
যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে
উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।
সহজে যদিও
ভালোবেসে ফেলি
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
আমি দূরে যাই-
স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া,
সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে…
স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া,
সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে…
এতো সহজেই
ভালোবেসে ফ্যালো কেন?
দূরে
আছো দূরে
তোমাকে পারিনি
ছুঁতে, তোমার তোমাকে-
উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ,
পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি।
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ,
পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি।
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
যেভাবে ঝিনুক
খুলে মুক্ত খোঁজে লোকে
আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ,
পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী।
আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ,
পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী।
শরীরের তীব্রতম
গভীর উল্লাসে
তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি-
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
জীবনের ’পরে রাখা বিশ্বাসের হাত
কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা।
কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে
বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়-
তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি-
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
জীবনের ’পরে রাখা বিশ্বাসের হাত
কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা।
কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে
বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়-
তোমাকে পারিনি
ছুঁতে-আমার তোমাকে,
ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি
তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের।
অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া-
ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি
তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের।
অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া-
তোমার তোমাকে
আমি ছুঁতে পারি নাই।।
মানুষের
মানচিত্র-১
আহারে বৃষ্টির
রা, সোহাগি লো, আমি থাকি দূর পরবাসে।
কান্দে না তোমার বুকে একঝাঁক বুনোপাখি
অবুঝ কৈতর?
কেমনে ফুরায় নিশি? বলো সই, কেমনে- বা কাটাও প্রহর?
পরাণ ছাপায়ে নামে বাউরি বাতাস, দারুণ বৃষ্টির মাসে।
কেমনে ফুরায় নিশি? বলো সই, কেমনে- বা কাটাও প্রহর?
পরাণ ছাপায়ে নামে বাউরি বাতাস, দারুণ বৃষ্টির মাসে।
যে বলে সে বলে
কথা, কাছে বসে, হাতে খিলিপান দিয়ে কয়-
এতো জল ঝরে তবু পরান ভেজে না কেন, কও তো মরদ?
দুয়ারে লাগায়ে খিল যদি কেউ থাকে তারে কে দেবে দরদ।
শরীরের মোহনায় দেখি তার বুনো ঢেউ রক্ত-মাংসময়।
এতো জল ঝরে তবু পরান ভেজে না কেন, কও তো মরদ?
দুয়ারে লাগায়ে খিল যদি কেউ থাকে তারে কে দেবে দরদ।
শরীরের মোহনায় দেখি তার বুনো ঢেউ রক্ত-মাংসময়।
শরীর গুটায়ে
রাখি, শামুকের মতো যাই গুটায়ে ভেতরে।
অন্ধকার চিরে চিরে বিজুলির ধলা দাঁত উপহাসে হাসে,
আমি বলি- ক্ষমা দাও, পরান বন্ধুয়া মোর থাকে পরবাসে,
দেহের রেকাবি খুলে পরানের খিলিপান কে খাওয়াবে তোরে।
অন্ধকার চিরে চিরে বিজুলির ধলা দাঁত উপহাসে হাসে,
আমি বলি- ক্ষমা দাও, পরান বন্ধুয়া মোর থাকে পরবাসে,
দেহের রেকাবি খুলে পরানের খিলিপান কে খাওয়াবে তোরে।
গতবার আষাঢ়ও
পার হয়ে গেলো তাও নামে না বাদল,
এবার জ্যোষ্ঠিতে মাঠে নেমে গেছে কিষানের লাঙল-জোয়াল ।
আমাদের মাঝে দেখো জমির ভাগের মতো কতো শত আল্,
এই দূর পরবাস কবে যাবে? জমিনের আসল আদল।
কবে পাবো? কবে পাবো আল্ হীন একখণ্ড মানব-জমিন ?
পরবাস থাকবে না, থাকবে না দূরত্বের এই রীতি-নীতি।
মহুয়ার মদ খেয়ে মত্ত হয়ে থাকা সেই পার্বনের তিথি
কবে পাবো? কবে পাবো শর্তহীন আবাদের নির্বিরোধ দিন ?
এবার জ্যোষ্ঠিতে মাঠে নেমে গেছে কিষানের লাঙল-জোয়াল ।
আমাদের মাঝে দেখো জমির ভাগের মতো কতো শত আল্,
এই দূর পরবাস কবে যাবে? জমিনের আসল আদল।
কবে পাবো? কবে পাবো আল্ হীন একখণ্ড মানব-জমিন ?
পরবাস থাকবে না, থাকবে না দূরত্বের এই রীতি-নীতি।
মহুয়ার মদ খেয়ে মত্ত হয়ে থাকা সেই পার্বনের তিথি
কবে পাবো? কবে পাবো শর্তহীন আবাদের নির্বিরোধ দিন ?
এ
কেমন ভ্রান্তি আমার
এ কেমন
ভ্রান্তি আমার !
এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো, বহুদূরে,
দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ।
এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি,
অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ-
তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান।
এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো, বহুদূরে,
দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ।
এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি,
অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ-
তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান।
হাত রাখলেই মনে
হয় স্পর্শহীন করতল রেখেছো চুলে,
স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল।
তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো,
সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত
করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে।
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি..
স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল।
তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো,
সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত
করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে।
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি..
কুশল শুধালে
মনে হয় তুমি আসোনি
পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,
আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।
পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,
আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।
তুমি
বরং কুকুর পোষো
তুমি বরং কুকুর
পোষো,
প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়,
তোর জন্য বিড়ালই ঠিক,
বরং তুমি বিড়ালই পোষো
খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়
খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা
প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়,
তোর জন্য বিড়ালই ঠিক,
বরং তুমি বিড়ালই পোষো
খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়
খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা
লক্ষী সোনা, এখন তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো
শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়,
কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।
ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি,
তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো
উংক পাবে, জলও পাবে।
চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই,
ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।
শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়,
কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।
ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি,
তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো
উংক পাবে, জলও পাবে।
চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই,
ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।
ঘোলা পানির
আড়াল পেলে
কে আর পাবে তোমার দেখা।
মাছ শিকারেও নামতে পারো
তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে
দেখাও তোমার গভীর মেধা।
কে আর পাবে তোমার দেখা।
মাছ শিকারেও নামতে পারো
তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে
দেখাও তোমার গভীর মেধা।
তুমি তোমার
স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো
নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?
শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যধি
তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো,
কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়
তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে ?
নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?
শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যধি
তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো,
কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়
তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে ?
আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ
যেমন রক্তের
মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ
তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি
ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
ক্রমশঃ উঠছে ফুটে ক্ষয়রোগ, রোগের প্রকোপ
তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি
ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
ক্রমশঃ উঠছে ফুটে ক্ষয়রোগ, রোগের প্রকোপ
একদার অন্ধকারে
ধর্ম এনে দিয়েছিল আলো,
আজ তার কংকালের হাড় আর পঁচা মাংসগুলো
ফেরি কোরে ফেরে কিছু স্বার্থাণ্বেষী ফাউল মানুষ-
সৃষ্টির অজানা অংশ পূর্ণ করে গালগল্প দিয়ে।
আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ।
আজ তার কংকালের হাড় আর পঁচা মাংসগুলো
ফেরি কোরে ফেরে কিছু স্বার্থাণ্বেষী ফাউল মানুষ-
সৃষ্টির অজানা অংশ পূর্ণ করে গালগল্প দিয়ে।
আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ।
ধর্মান্ধের
ধর্ম নেই, আছে লোভ, ঘৃণ্য চতুরতা,
মানুষের পৃথিবীকে শত খণ্ডে বিভক্ত করেছে
তারা টিকিয়ে রেখেছে শ্রেণীভেদ ঈশ্বরের নামে।
ঈশ্বরের নামে তারা অনাচার করেছে জায়েজ।
মানুষের পৃথিবীকে শত খণ্ডে বিভক্ত করেছে
তারা টিকিয়ে রেখেছে শ্রেণীভেদ ঈশ্বরের নামে।
ঈশ্বরের নামে তারা অনাচার করেছে জায়েজ।
হা অন্ধতা! হা
মুর্খামি! কতোদূর কোথায় ঈশ্বর!
অজানা শক্তির নামে হত্যাযজ্ঞ কতো রক্তপাত,
কত যে নির্মম ঝড় বয়ে গেল হাজার বছরে!
কোন্ সেই বেহেস্তের হুর আর তহুরা শরাব?
অন্তহীন যৌনাচারে নিমজ্জিত অনন্ত সময়?
যার লোভে মানুষও হয়ে যায় পশুর অধম।
অজানা শক্তির নামে হত্যাযজ্ঞ কতো রক্তপাত,
কত যে নির্মম ঝড় বয়ে গেল হাজার বছরে!
কোন্ সেই বেহেস্তের হুর আর তহুরা শরাব?
অন্তহীন যৌনাচারে নিমজ্জিত অনন্ত সময়?
যার লোভে মানুষও হয়ে যায় পশুর অধম।
আর কোন দোজখ বা
আছে এর চেয়ে ভয়াবহ
ক্ষুধার আগুন সে কি হাবিয়ার চেয়ে খুব কম?
সে কি রৌরবের চেয়ে নম্র কোন নরোম আগুন?
ক্ষুধার আগুন সে কি হাবিয়ার চেয়ে খুব কম?
সে কি রৌরবের চেয়ে নম্র কোন নরোম আগুন?
ইহকাল ভুলে
যারা পরকালে মত্ত হয়ে আছে
চলে যাক সব পরপারে বেহেস্তে তাদের
আমরা থাকবো এই পৃথিবীর মাটি জলে নীলে,
দ্বন্দ্বময় সভ্যতার গতিশীল স্রোতের ধারায়
আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ
চলে যাক সব পরপারে বেহেস্তে তাদের
আমরা থাকবো এই পৃথিবীর মাটি জলে নীলে,
দ্বন্দ্বময় সভ্যতার গতিশীল স্রোতের ধারায়
আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ
ভালবাসার
সময় তো নেই
ভালবাসার সময়
তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।
ঘামের জলে ভিজে
সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।
কাজের মাঝে দিন
কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।
নদী আমার বয় না
পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।
তোমার দিকে
ফিরবো কখন
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।
বাতাসে
লাশের গন্ধ
আজো আমি বাতাসে
লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?
জাতির পতাকা
খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের
গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন -
স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন -
স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
ইশতেহার
পৃথিবীতে মানুষ
তখনও ব্যক্তিস্বার্থে ভাগ হয়ে যায়নি।
ভূমির কোনো মালিকানা হয়নি তখনো।
তখনো মানুষ শুধু পৃথিবীর সন্তান ।
অরন্য আর মরুভূমির
সমুদ্র আর পাহাড়ের ভাষা তখন আমরা জানি।
আমরা ভূমিকে কর্ষণ করে শস্য জন্মাতে শিখেছি।
আমরা বিশল্যকরণীর চিকিৎসা জানি
আমরা শীত আর উত্তাপে সহনশীল
ত্বক তৈরি করেছি আমাদের শরীরে।
আমারা তখন সোমরস, নৃত্য আর
শরীরের পবিত্র উৎসব শিখেছি।
আমাদের নারীরা জমিনে শস্য ফলায়
আর আমাদের পুরুষেরা শিকার করে ঘাই হরিণ।
আমারা সবাই মিলে খাই আর পান করি।
জ্বলন্ত আগুনকে ঘিরে সবাই আমারা নাচি
আর প্রশংসা করি পৃথিবীর।
আমরা আমাদের বিশ্ময় আর সুন্দরগুলোকে বন্দনা করি।
পৃথিবীর পূর্ণিমা রাতের ঝলোমলো জ্যোৎস্নায়
পৃথিবীর নারী আর পুরুষেরা
পাহাড়ের সবুজ অরণ্যে এসে শরীরের উৎসব করে।
তখন কী আনন্দরঞ্জিত আমাদের বিশ্বাস।
তখন কী শ্রমমুখর আমাদের দিনমান।
তখন কী গৌরবময় আমাদের মৃত্যু।
তারপর -
কৌমজীবন ভেঙে আমরা গড়লাম সামন্ত সমাজ।
বন্যপ্রাণীর বিরুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য অস্ত্রগুলো
আমরা ব্যবহার করলাম আমাদের নিজের বিরুদ্ধে।
আমাদের কেউ কেউ শ্রমহীনতায় প্রশান্তি খুঁজে পেতে চাইলো।
দুর্বল মানুষেরা হয়ে উঠলো আমাদের সেবার সামগ্রী।
আমাদের কারো কারো তর্জনী জীবন ও মৃত্যুর নির্ধারক হলো।
ভারি জিনিস টানার জন্যে আমরা যে চাকা তৈরি করেছিলাম
তাকে ব্যবহার করলাম আমাদের পায়ের পেশীর আরামের জন্যে।
আমাদের বন্য অস্ত্র সভ্যতার নামে
গ্রাস করে চললো মানুষের জীবন ও জনপদ।
আমারা আমাদের চোখকে সুদূরপ্রসারী করার জন্যে দূরবীন
আর সুক্ষè নিরীক্ষণের জন্যে অনুবীক্ষণ তৈরি করলাম।
আমাদের বাহুর বিকল্প হলো ভারি যন্ত্র আর কারখানা।
আমাদের পায়ের গতি বর্ধন করলো উড়ন্ত বিমান।
আমাদের কণ্ঠস্বর বর্ধিত হলো,
আমাদের ভাষা ও বক্তব্য গ্রন্থিত হলো,
আমরা রচনা করলাম আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিহাস।
আমাদের মস্তিস্ককে আরো নিখুঁত ও ব্যাপক করার জন্যে
আমরা তৈরি করলাম কম্পিউটার।
আমাদের নির্মিত যন্ত্র শৃঙ্খলিত করলো আমাদের
আমাদের নির্মিত নগর আবদ্ধ করলো আমাদের
আমাদের পুঁজি ও ক্ষমতা অবরুদ্ধ করলো আমাদের
আমাদের নভোযান উৎকেন্দ্রিক করলো আমাদের।
অস্তিত্ব রক্ষার নামে আমরা তৈরি করলাম মারনাস্ত্র।
জীবন রক্ষার নামে আমরা তৈরি করলাম
জীবনবিনাশী হাতিয়ার।
আমরা তৈরি করলাম পৃথিবী নির্মূল-সক্ষম পারমানবিক বোমা।
একটার পর একটা খাঁচা নির্মাণ করেছি আমরা।
আবার সে খাঁচা ভেঙে নতুন খাঁচা বানিয়েছি -
খাঁচার পর খাঁচায় আটকা পড়তে পড়তে
খাঁচার আঘাতে ভাঙতে ভাঙতে, টুকরো টুকরো হয়ে
আজ আমরা একা হয়ে গেছি।
প্রত্যেকে একা হয়ে গেছি।
কী ভয়ংকর এই একাকীত্ব !
কী নির্মম এই বান্ধবহীনতা !
কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা !
এই সৌরমন্ডলের
এই পৃথিবীর এক কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে
যে-শিশুর জন্ম।
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে ছুটে বেড়ানোর অদম্য স্বপ্ন
যে-কিশোরের।
জোৎস্না যাকে প্লাবিত করে।
বনভূমি যাকে দুর্বিনীত করে।
নদীর জোয়ার যাকে ডাকে নেশার ডাকের মতো।
অথচ যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ঔপনিবেশিক জোয়াল
গোলাম বানানোর শিক্ষাযন্ত্র।
অথচ যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে
এক হৃদয়হীন ধর্মের আচার।
অথচ যাকে শৃঙ্খলিত করা হয়েছে স্বপড়বহীন সংস্কারে।
যে-তরুণ উনসত্তরের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে
যে-তরুণ অস্ত্র হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছে
যে-তরুণের বিশ্বাস, স্বপড়ব, সাধ,
স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভেঙে খান খান হয়েছে,
অন্তরে রক্তাক্ত যে-তরুণ নিরুপায় দেখেছে নৈরাজ্য,
প্রতারণা আর নির্মমতাকে।
দুর্ভিক্ষ আর দুঃশাসন যার নিভৃত বাসনাগুলো
দুমড়ে মুচড়ে তছনছ করেছে
যে-যুবক দেখেছে এক অদৃশ্য হাতের খেলা
দেখেছে অদৃশ্য এক কালোহাত
যে-যুবক মিছিলে নেমেছে
বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে
আকন্ঠ মদের নেশায় চুর হয়ে থেকেছে
অনাহারে উড়নচন্ডী ঘুরেছে
যে-যুবক ভয়ানক অনিশ্চয়তা আর বাজির মুখে
ছুঁড়ে দিয়েছে নিজেকে
যে-পুরুষ এক শ্যামল নারীর সাথে জীবন বিনিময় করেছে
যে-পুরুষ ক্ষুধা, মৃত্যু আর বেদনার সাথে লড়ছে এখনো,
লড়ছে বৈষম্য আর শ্রেণীর বিরুদ্ধে -
সে আমি !
আমি একা ।
এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা।
আমার অন্তর রক্তাক্ত।
আমার মস্তিস্ক জর্জরিত।
আমার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রিত।
আমার শরীর লাবণ্যহীন।
আমার জিভ কাটা।
তবু এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন আমাকে কাতর করে
আমাকে তাড়ায়…
আমাদের কৃষকেরা
শূন্য পাকস্থলি আর বুকে ক্ষয়কাশ নিয়ে মাঠে যায়।
আমাদের নারীরা ক্ষুধায় পীড়িত, হাড্ডিসার।
আমাদের শ্রমিকেরা স্বাস্থ্যহীন।
আমাদের শিশুরা অপুষ্ট, বীভৎস-করুণ।
আমাদের অধিকাংশ মানুষ ক্ষুধা, অকালমৃত্যু আর
দীর্ঘশ্বাসের সমুদ্রে ডুবে আছে।
পৃথিবীর যুদ্ধবাজ লোকদের জটিল পরিচালনায়
ষড়যন্ত্রে আর নির্মমতায়,
আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা
আর চরম অসহায়ত্বের আবর্তে আটকা পড়েছি।
কী বেদনাময় এই অনিশ্চয়তা !
কী বিভৎস এই ভালোবাসাহীনতা !
কী নির্মম এই স্বপ্ন হীনতা !
আজ আমরা আবার সেই
বিশ্বাস আর আনন্দকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
সাহস আর সরলতাকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
শ্রম আর উৎসবকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
ভালোবাসা আর প্রশান্তি ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
স্বাস্থ্য আর শরীরের লাবণ্যকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই কান্নাবিহীন আর দীর্ঘশ্বাসহীন জীবনের কাছে যেতে চাই
আজ আমরা শোষণ আর শঠতা
অকালমৃত্যু আর ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
আমাদের সমৃদ্ধ এই বিজ্ঞান নিয়ে
আমাদের অভিজ্ঞতাময় এই শিল্পসম্ভার নিয়ে
আমাদের দূরলক্ষ্য আর সূক্ষ বীক্ষণ নিয়ে
আমাদের দ্বন্দময় বেগবান দর্শন নিয়ে
আমরা ফিরে যাবো আমাদের বিশ্বাসের পৃথিবীতে,
আমাদের শ্রম, উৎসব, আনন্দ আর প্রশান্তির— পৃথিবীতে।
পরমাণুর সঠিক ব্যবহার
আমাদের শস্যের উৎপাদন প্রয়োজনতুল্য করে তুলবে,
আমাদের কারখানাগুলো কখনোই হত্যার অস্ত্র তৈরি করবে না,
আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান নিরোগ করবে পৃথিবীকে;
আমাদের মর্যাদার ভিত্তি হবে মেধা, সাহস আর শ্রম।
আমাদের পুরুষেরা সুলতানের ছবির পুরুষদের মতো
স্বাস্থ্যবান, কর্মঠ আর প্রচন্ড পৌরুষদীপ্ত হবে।
আমাদের নারীরা হবে শ্রমবতী, লক্ষীমন্ত আর লাবণ্যময়ী।
আমাদের শিশুরা হবে পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পদ।
আমরা শস্য আর স্বাস্থ্যের, সুন্দর আর গৌরবের
কবিতা লিখবো।
আমরা গান গাইবো
আমাদের বসন্ত আর বৃষ্টির বন্দনা করে।
আমরা উৎসব করবো শস্যের
আমরা উৎসব করবো পূর্ণিমার
আমরা উৎসব করবো
আমাদের গৌরবময় মৃত্যু আর বেগবান জীবনের।
কিন্তু -
এই স্বপ্নের জীবনে যাবার পথ আটকে আছে
সামান্য কিছু মানুষ।
অস্ত্র আর সেনা-ছাউনিগুলো তাদের দখলে।
সমাজ পরিচালনার নামে তারা এক ভয়ংকর কারাগার
তৈরি করেছে আমাদের চারপাশে।
তারা ক্ষুধা দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
তারা বস্ত্রহীনতা দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
তারা গৃহহীনতা দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
তারা জুলুম দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
বুলেট দিয়ে বন্দী করেছে।
তারা সবচে কম শ্রম দেয়
আর সবচে বেশি সম্পদ ভোগ করে;
তারা সবচে ভালো খাদ্যগুলো খায়
আর সবচে দামি পোষাকগুলো পরে।
তাদের পুরুষদের শরীর মেদে আবৃত, কদাকার;
তাদের মেয়েদের মুখের ত্বক দেখা যায় না, প্রসাধনে ঢাকা;
তারা আলস্য আর কর্মহীনতায় কাতর, কুৎসিত।
তাদের ঈর্ষা কুটিলতাময়
তাদের হিংসা পর্বতপ্রমাণ
তাদের নির্মমতা ক্ষমাহীন
তাদের জুলুম অশ্র“তপূর্ব।
তারা আমাদের জিভ কেটে নিতে চায়
তারা আমাদের চোখ উপরে ফেলতে চায়
তারা আমাদের মেধা বিকৃত করতে চায়
তারা আমাদের শ্রবণ বধির করে দিতে চায়
তারা আমাদের পেশীগুলো অকেজো করে দিতে চায়
আমাদের সন্তানদেরও তারা চায় গোলাম বানাতে।
একদা অরেণ্যে
যেভাবে অতিকায় বন্যপ্রাণী হত্যা করে
আমরা অরণ্যজীবনে শানি— ফিরিয়ে এনেছি,
আজ এইসব অতিকায় কদাকার বন্যমানুষগুলো
নির্মূল করে
আমরা আবার সমতার পৃখিবী বানাবো
সম্পদ আর আন›দের পৃখিবী বানাবো
শ্রম আর প্রশানির— পৃখিবী বানাবো।
ভূমির কোনো মালিকানা হয়নি তখনো।
তখনো মানুষ শুধু পৃথিবীর সন্তান ।
অরন্য আর মরুভূমির
সমুদ্র আর পাহাড়ের ভাষা তখন আমরা জানি।
আমরা ভূমিকে কর্ষণ করে শস্য জন্মাতে শিখেছি।
আমরা বিশল্যকরণীর চিকিৎসা জানি
আমরা শীত আর উত্তাপে সহনশীল
ত্বক তৈরি করেছি আমাদের শরীরে।
আমারা তখন সোমরস, নৃত্য আর
শরীরের পবিত্র উৎসব শিখেছি।
আমাদের নারীরা জমিনে শস্য ফলায়
আর আমাদের পুরুষেরা শিকার করে ঘাই হরিণ।
আমারা সবাই মিলে খাই আর পান করি।
জ্বলন্ত আগুনকে ঘিরে সবাই আমারা নাচি
আর প্রশংসা করি পৃথিবীর।
আমরা আমাদের বিশ্ময় আর সুন্দরগুলোকে বন্দনা করি।
পৃথিবীর পূর্ণিমা রাতের ঝলোমলো জ্যোৎস্নায়
পৃথিবীর নারী আর পুরুষেরা
পাহাড়ের সবুজ অরণ্যে এসে শরীরের উৎসব করে।
তখন কী আনন্দরঞ্জিত আমাদের বিশ্বাস।
তখন কী শ্রমমুখর আমাদের দিনমান।
তখন কী গৌরবময় আমাদের মৃত্যু।
তারপর -
কৌমজীবন ভেঙে আমরা গড়লাম সামন্ত সমাজ।
বন্যপ্রাণীর বিরুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য অস্ত্রগুলো
আমরা ব্যবহার করলাম আমাদের নিজের বিরুদ্ধে।
আমাদের কেউ কেউ শ্রমহীনতায় প্রশান্তি খুঁজে পেতে চাইলো।
দুর্বল মানুষেরা হয়ে উঠলো আমাদের সেবার সামগ্রী।
আমাদের কারো কারো তর্জনী জীবন ও মৃত্যুর নির্ধারক হলো।
ভারি জিনিস টানার জন্যে আমরা যে চাকা তৈরি করেছিলাম
তাকে ব্যবহার করলাম আমাদের পায়ের পেশীর আরামের জন্যে।
আমাদের বন্য অস্ত্র সভ্যতার নামে
গ্রাস করে চললো মানুষের জীবন ও জনপদ।
আমারা আমাদের চোখকে সুদূরপ্রসারী করার জন্যে দূরবীন
আর সুক্ষè নিরীক্ষণের জন্যে অনুবীক্ষণ তৈরি করলাম।
আমাদের বাহুর বিকল্প হলো ভারি যন্ত্র আর কারখানা।
আমাদের পায়ের গতি বর্ধন করলো উড়ন্ত বিমান।
আমাদের কণ্ঠস্বর বর্ধিত হলো,
আমাদের ভাষা ও বক্তব্য গ্রন্থিত হলো,
আমরা রচনা করলাম আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিহাস।
আমাদের মস্তিস্ককে আরো নিখুঁত ও ব্যাপক করার জন্যে
আমরা তৈরি করলাম কম্পিউটার।
আমাদের নির্মিত যন্ত্র শৃঙ্খলিত করলো আমাদের
আমাদের নির্মিত নগর আবদ্ধ করলো আমাদের
আমাদের পুঁজি ও ক্ষমতা অবরুদ্ধ করলো আমাদের
আমাদের নভোযান উৎকেন্দ্রিক করলো আমাদের।
অস্তিত্ব রক্ষার নামে আমরা তৈরি করলাম মারনাস্ত্র।
জীবন রক্ষার নামে আমরা তৈরি করলাম
জীবনবিনাশী হাতিয়ার।
আমরা তৈরি করলাম পৃথিবী নির্মূল-সক্ষম পারমানবিক বোমা।
একটার পর একটা খাঁচা নির্মাণ করেছি আমরা।
আবার সে খাঁচা ভেঙে নতুন খাঁচা বানিয়েছি -
খাঁচার পর খাঁচায় আটকা পড়তে পড়তে
খাঁচার আঘাতে ভাঙতে ভাঙতে, টুকরো টুকরো হয়ে
আজ আমরা একা হয়ে গেছি।
প্রত্যেকে একা হয়ে গেছি।
কী ভয়ংকর এই একাকীত্ব !
কী নির্মম এই বান্ধবহীনতা !
কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা !
এই সৌরমন্ডলের
এই পৃথিবীর এক কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে
যে-শিশুর জন্ম।
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে ছুটে বেড়ানোর অদম্য স্বপ্ন
যে-কিশোরের।
জোৎস্না যাকে প্লাবিত করে।
বনভূমি যাকে দুর্বিনীত করে।
নদীর জোয়ার যাকে ডাকে নেশার ডাকের মতো।
অথচ যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ঔপনিবেশিক জোয়াল
গোলাম বানানোর শিক্ষাযন্ত্র।
অথচ যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে
এক হৃদয়হীন ধর্মের আচার।
অথচ যাকে শৃঙ্খলিত করা হয়েছে স্বপড়বহীন সংস্কারে।
যে-তরুণ উনসত্তরের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে
যে-তরুণ অস্ত্র হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছে
যে-তরুণের বিশ্বাস, স্বপড়ব, সাধ,
স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভেঙে খান খান হয়েছে,
অন্তরে রক্তাক্ত যে-তরুণ নিরুপায় দেখেছে নৈরাজ্য,
প্রতারণা আর নির্মমতাকে।
দুর্ভিক্ষ আর দুঃশাসন যার নিভৃত বাসনাগুলো
দুমড়ে মুচড়ে তছনছ করেছে
যে-যুবক দেখেছে এক অদৃশ্য হাতের খেলা
দেখেছে অদৃশ্য এক কালোহাত
যে-যুবক মিছিলে নেমেছে
বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে
আকন্ঠ মদের নেশায় চুর হয়ে থেকেছে
অনাহারে উড়নচন্ডী ঘুরেছে
যে-যুবক ভয়ানক অনিশ্চয়তা আর বাজির মুখে
ছুঁড়ে দিয়েছে নিজেকে
যে-পুরুষ এক শ্যামল নারীর সাথে জীবন বিনিময় করেছে
যে-পুরুষ ক্ষুধা, মৃত্যু আর বেদনার সাথে লড়ছে এখনো,
লড়ছে বৈষম্য আর শ্রেণীর বিরুদ্ধে -
সে আমি !
আমি একা ।
এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা।
আমার অন্তর রক্তাক্ত।
আমার মস্তিস্ক জর্জরিত।
আমার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রিত।
আমার শরীর লাবণ্যহীন।
আমার জিভ কাটা।
তবু এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন আমাকে কাতর করে
আমাকে তাড়ায়…
আমাদের কৃষকেরা
শূন্য পাকস্থলি আর বুকে ক্ষয়কাশ নিয়ে মাঠে যায়।
আমাদের নারীরা ক্ষুধায় পীড়িত, হাড্ডিসার।
আমাদের শ্রমিকেরা স্বাস্থ্যহীন।
আমাদের শিশুরা অপুষ্ট, বীভৎস-করুণ।
আমাদের অধিকাংশ মানুষ ক্ষুধা, অকালমৃত্যু আর
দীর্ঘশ্বাসের সমুদ্রে ডুবে আছে।
পৃথিবীর যুদ্ধবাজ লোকদের জটিল পরিচালনায়
ষড়যন্ত্রে আর নির্মমতায়,
আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা
আর চরম অসহায়ত্বের আবর্তে আটকা পড়েছি।
কী বেদনাময় এই অনিশ্চয়তা !
কী বিভৎস এই ভালোবাসাহীনতা !
কী নির্মম এই স্বপ্ন হীনতা !
আজ আমরা আবার সেই
বিশ্বাস আর আনন্দকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
সাহস আর সরলতাকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
শ্রম আর উৎসবকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
ভালোবাসা আর প্রশান্তি ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই
স্বাস্থ্য আর শরীরের লাবণ্যকে ফিরে পেতে চাই
আজ আমরা আবার সেই কান্নাবিহীন আর দীর্ঘশ্বাসহীন জীবনের কাছে যেতে চাই
আজ আমরা শোষণ আর শঠতা
অকালমৃত্যু আর ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
আমাদের সমৃদ্ধ এই বিজ্ঞান নিয়ে
আমাদের অভিজ্ঞতাময় এই শিল্পসম্ভার নিয়ে
আমাদের দূরলক্ষ্য আর সূক্ষ বীক্ষণ নিয়ে
আমাদের দ্বন্দময় বেগবান দর্শন নিয়ে
আমরা ফিরে যাবো আমাদের বিশ্বাসের পৃথিবীতে,
আমাদের শ্রম, উৎসব, আনন্দ আর প্রশান্তির— পৃথিবীতে।
পরমাণুর সঠিক ব্যবহার
আমাদের শস্যের উৎপাদন প্রয়োজনতুল্য করে তুলবে,
আমাদের কারখানাগুলো কখনোই হত্যার অস্ত্র তৈরি করবে না,
আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান নিরোগ করবে পৃথিবীকে;
আমাদের মর্যাদার ভিত্তি হবে মেধা, সাহস আর শ্রম।
আমাদের পুরুষেরা সুলতানের ছবির পুরুষদের মতো
স্বাস্থ্যবান, কর্মঠ আর প্রচন্ড পৌরুষদীপ্ত হবে।
আমাদের নারীরা হবে শ্রমবতী, লক্ষীমন্ত আর লাবণ্যময়ী।
আমাদের শিশুরা হবে পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পদ।
আমরা শস্য আর স্বাস্থ্যের, সুন্দর আর গৌরবের
কবিতা লিখবো।
আমরা গান গাইবো
আমাদের বসন্ত আর বৃষ্টির বন্দনা করে।
আমরা উৎসব করবো শস্যের
আমরা উৎসব করবো পূর্ণিমার
আমরা উৎসব করবো
আমাদের গৌরবময় মৃত্যু আর বেগবান জীবনের।
কিন্তু -
এই স্বপ্নের জীবনে যাবার পথ আটকে আছে
সামান্য কিছু মানুষ।
অস্ত্র আর সেনা-ছাউনিগুলো তাদের দখলে।
সমাজ পরিচালনার নামে তারা এক ভয়ংকর কারাগার
তৈরি করেছে আমাদের চারপাশে।
তারা ক্ষুধা দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
তারা বস্ত্রহীনতা দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
তারা গৃহহীনতা দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
তারা জুলুম দিয়ে আমাদের বন্দী করেছে
বুলেট দিয়ে বন্দী করেছে।
তারা সবচে কম শ্রম দেয়
আর সবচে বেশি সম্পদ ভোগ করে;
তারা সবচে ভালো খাদ্যগুলো খায়
আর সবচে দামি পোষাকগুলো পরে।
তাদের পুরুষদের শরীর মেদে আবৃত, কদাকার;
তাদের মেয়েদের মুখের ত্বক দেখা যায় না, প্রসাধনে ঢাকা;
তারা আলস্য আর কর্মহীনতায় কাতর, কুৎসিত।
তাদের ঈর্ষা কুটিলতাময়
তাদের হিংসা পর্বতপ্রমাণ
তাদের নির্মমতা ক্ষমাহীন
তাদের জুলুম অশ্র“তপূর্ব।
তারা আমাদের জিভ কেটে নিতে চায়
তারা আমাদের চোখ উপরে ফেলতে চায়
তারা আমাদের মেধা বিকৃত করতে চায়
তারা আমাদের শ্রবণ বধির করে দিতে চায়
তারা আমাদের পেশীগুলো অকেজো করে দিতে চায়
আমাদের সন্তানদেরও তারা চায় গোলাম বানাতে।
একদা অরেণ্যে
যেভাবে অতিকায় বন্যপ্রাণী হত্যা করে
আমরা অরণ্যজীবনে শানি— ফিরিয়ে এনেছি,
আজ এইসব অতিকায় কদাকার বন্যমানুষগুলো
নির্মূল করে
আমরা আবার সমতার পৃখিবী বানাবো
সম্পদ আর আন›দের পৃখিবী বানাবো
শ্রম আর প্রশানির— পৃখিবী বানাবো।
মুখোমুখি
আমারা কথা বলতে
চাই,
আমারা আমাদের ক্ষুধার কথা বলতে এসেছি,
আমারা কথা বলবো।
তোমরা সঙ্গিন উঁচিয়ে আছো
তোমরা রাইফেল তাক করে রেখেছো
তোমরা অস্ত্রধারী পান্ডা লেলিয়ে দিয়েছো -
মিছিলের পরে ট্রাক চালিয়ে দিয়েও
আমাদের ফেরাতে পারোনি।
আমরা আমাদের বস্ত্রহীনতার কথা বলতে এসেছি,
আমারা কথা বলবো।
লাঠিচার্জ আমাদের ফেরাতে পারেনি
কাঁদানে গ্যাস আমাদের ফেরাতে পারেনি
রাইফেল আমাদের ফেরাতে পারেনি
মেশিন গান আমাদের ফেরাতে পারেনি -
আমারা এসেছি,
আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো।
কৃষক তোমাদের পক্ষে যাবে না
শ্রমিক তোমাদের পক্ষে যাবে না
ছাত্র তোমাদের পক্ষে যাবে না
সুন্দর তোমাদের পক্ষে যাবে না
স্বপ্ন তোমাদের পক্ষে যাবে না -
তারা সকলেই কষ্টে আছে
তারা সকলেই অনটনে আছে
তারা সকলেই বিক্ষোভের হাত তুলেছে।
তোমাদের পক্ষে যাবে কুকুর
তোমাদের পক্ষে যাবে সুবিধাভোগী
তোমাদের পক্ষে যাবে বিত্তবান নেকড়েরা।
বৃক্ষ তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে
শস্য তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে
রক্ত তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে
তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত শিশুরা।
লক্ষ মৃত্যু আমাদের ফেরাতে পারেনি
আমারা এসেছি।
আমারা আমাদের শিক্ষাহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের চিকিৎসাহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের বস্ত্রহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কথা বলবো।
আমরা তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা থেকে এসেছি
আমরা সিপাহী আন্দোলনের দুর্গ থেকে এসেছি
আমরা তেভাগার কৃষক, নাচোলের যোদ্ধা
আমরা চটকলের শ্রমিক, আমরা সূর্যসেনের ভাই
আমরা একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে এসেছি
কাঁধে স্টেন, কোমরে কার্তুজ, হাতে উন্মত্ত গ্রেনেড -
আমরা এসেছি।
আমারা আমাদের ক্ষুধার কথা বলতে এসেছি,
আমারা কথা বলবো।
তোমরা সঙ্গিন উঁচিয়ে আছো
তোমরা রাইফেল তাক করে রেখেছো
তোমরা অস্ত্রধারী পান্ডা লেলিয়ে দিয়েছো -
মিছিলের পরে ট্রাক চালিয়ে দিয়েও
আমাদের ফেরাতে পারোনি।
আমরা আমাদের বস্ত্রহীনতার কথা বলতে এসেছি,
আমারা কথা বলবো।
লাঠিচার্জ আমাদের ফেরাতে পারেনি
কাঁদানে গ্যাস আমাদের ফেরাতে পারেনি
রাইফেল আমাদের ফেরাতে পারেনি
মেশিন গান আমাদের ফেরাতে পারেনি -
আমারা এসেছি,
আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো।
কৃষক তোমাদের পক্ষে যাবে না
শ্রমিক তোমাদের পক্ষে যাবে না
ছাত্র তোমাদের পক্ষে যাবে না
সুন্দর তোমাদের পক্ষে যাবে না
স্বপ্ন তোমাদের পক্ষে যাবে না -
তারা সকলেই কষ্টে আছে
তারা সকলেই অনটনে আছে
তারা সকলেই বিক্ষোভের হাত তুলেছে।
তোমাদের পক্ষে যাবে কুকুর
তোমাদের পক্ষে যাবে সুবিধাভোগী
তোমাদের পক্ষে যাবে বিত্তবান নেকড়েরা।
বৃক্ষ তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে
শস্য তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে
রক্ত তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে
তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত শিশুরা।
লক্ষ মৃত্যু আমাদের ফেরাতে পারেনি
আমারা এসেছি।
আমারা আমাদের শিক্ষাহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের চিকিৎসাহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের বস্ত্রহীনতার কথা বলবো
আমারা আমাদের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কথা বলবো।
আমরা তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা থেকে এসেছি
আমরা সিপাহী আন্দোলনের দুর্গ থেকে এসেছি
আমরা তেভাগার কৃষক, নাচোলের যোদ্ধা
আমরা চটকলের শ্রমিক, আমরা সূর্যসেনের ভাই
আমরা একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে এসেছি
কাঁধে স্টেন, কোমরে কার্তুজ, হাতে উন্মত্ত গ্রেনেড -
আমরা এসেছি।
পরিচয়
এতো যে ভাঙন, ধ্বংস, রক্ত -
মনে আমার বয়স হয় না।
এতো যে হাওয়ায় ওড়ায় স্মৃতি
এতো যে যে নদী ভঙছে দুকূল
মনে আমার বয়স হয় না।
ব্ইারে এবং বুকের মধ্যে
ডহয়ার ভেতর – হিয়ার মধ্যে
হারানো এক হল্দে পাখি উড়ছে বসছে
দুলছে, যেন শৈশবে সেই দোলনাখেলা -
হায়রে , আমার বয়স হয় না !
বন্ধুরা সব বিত্তে বাড়ে, চিত্তে বাড়ে
বাড়ে শনৈঃ গৃহস্থলি,
আমার তবু বয়স হয় না, বুদ্ধি হয় না।
একটি নতুন ভাষার খোঁজে
একটি ভালবাসার খোঁজে
যায় কেটে দিন …..
নখে এবং দাঁতে সবাই শান্ দিয়ে নেয়,
আমি আমার নিরীহ নখ ছাঁটছি কেবল
সবুজ মাজন কিনছি আমার দাঁতের জন্যে।
হায়রে , আমার বয়স হয় না, সংসারী মন পোক্ত হয় না -
অন্ধকারেও শরীর ঢেকে সাবধানে সব হাঁটছে যখন
আমি তখন ভেতর-বাহির খোলা রেখেছি,
আলোর সামনে খুলে রেখেছি।
আজো আমার বোধ হলো না।
ভেতরে নীল ক্রোধ হলো না
পরান-গলা রোধ হলো না -
পাথর এবং পাখির মাঝের ফারাক বুঝতে সময় লাগে,
বৃক্ষ এবং লতার মানে আজো আমি সবুজ বুঝি।
মনে আমার বয়স হয় না।
এতো যে হাওয়ায় ওড়ায় স্মৃতি
এতো যে যে নদী ভঙছে দুকূল
মনে আমার বয়স হয় না।
ব্ইারে এবং বুকের মধ্যে
ডহয়ার ভেতর – হিয়ার মধ্যে
হারানো এক হল্দে পাখি উড়ছে বসছে
দুলছে, যেন শৈশবে সেই দোলনাখেলা -
হায়রে , আমার বয়স হয় না !
বন্ধুরা সব বিত্তে বাড়ে, চিত্তে বাড়ে
বাড়ে শনৈঃ গৃহস্থলি,
আমার তবু বয়স হয় না, বুদ্ধি হয় না।
একটি নতুন ভাষার খোঁজে
একটি ভালবাসার খোঁজে
যায় কেটে দিন …..
নখে এবং দাঁতে সবাই শান্ দিয়ে নেয়,
আমি আমার নিরীহ নখ ছাঁটছি কেবল
সবুজ মাজন কিনছি আমার দাঁতের জন্যে।
হায়রে , আমার বয়স হয় না, সংসারী মন পোক্ত হয় না -
অন্ধকারেও শরীর ঢেকে সাবধানে সব হাঁটছে যখন
আমি তখন ভেতর-বাহির খোলা রেখেছি,
আলোর সামনে খুলে রেখেছি।
আজো আমার বোধ হলো না।
ভেতরে নীল ক্রোধ হলো না
পরান-গলা রোধ হলো না -
পাথর এবং পাখির মাঝের ফারাক বুঝতে সময় লাগে,
বৃক্ষ এবং লতার মানে আজো আমি সবুজ বুঝি।